ঢাকা ১২:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কনকনে ঠান্ডায় স্থবির উত্তরের জনজীবন

আমাদের বড়াল ডেস্ক :
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৪:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৪ ২৪৬ বার পঠিত

তীব্র শীতে উত্তরাঞ্চলে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় দিনের বেলাতেও যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। অনেক স্থানে গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। তীব্র শীতের কারণে বেকার রয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
আমাদের বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার বেড়া উপজেলায় তীব্র শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসংলগ্ন মালদাপাড়া, পেঁচাকোলা, জয়নগর, নাকালিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হতদরিদ্র মানুষ খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। দুইদিন পর গতকাল বিকালে সামান্য রোদের দেখা পেয়ে অনেকেই রোদে এসে দাঁড়ান। কিন্তু অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই রোদ মিলিয়ে গিয়ে উলটো হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। বাঁধে আশ্রিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই-তিন দিন তীব্র শীতের কারণে বেকার হয়ে রয়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমিক ও দিনমজুররা। এসব মানুষের বেশির ভাগই তাঁতশ্রমিক হিসেবে নয়তো ইটভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার কারণে তাঁতের সুতা আঠালো হয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। আবার ইটভাটাতেও রোদের অভাবে ইট শুকানো যাচ্ছে না। তাই তাঁতশ্রমিক ও ইটভাটার শ্রমিকদের বেকার হয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না। পেঁচাকোলা গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘দুই-তিন দিন ধইরা রোদের দেখা নাই। তাই ইট ভাটায়ও কাজ বন্ধ আছে। এমনিতেই শীতের কষ্ট, তার ওপর সংসার চালানোই মুশকিল হয়া দাঁড়াইছে।’
পৌষের মাঝামাঝিতে নদনদীবেষ্টিত চলনবিল অঞ্চলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি উত্তরে হিমালয় থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসে হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। গত তিন দিনের ব্যবধানে উপজেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি থেকে ১১ ডিগ্রিতে নেমেছে। শীতের দাপটে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিকেল গড়াতেই তাপমাত্রা নামছে পাল্লা দিয়ে। সন্ধ্যার পর শুরু হচ্ছে কুয়াশাপাত। মাঝরাতে বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। পাশাপাশি থেমে থেমে বইছে ঠান্ডা বাতাস। ঘন কুয়াশা থাকছে বেলা ২টা পর্যন্ত। এ সময় হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। পেটের দায়ে অনেক শ্রমজীবী মানুষ কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই কাজে বের হচ্ছেন।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দেশের উত্তরের দিনাজপুর জেলায় গত বুধবার এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এখানে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পর ঝলমলে রোদ উঠায় মানুষজন কয়েকদিনের কনকনে ঠান্ডার অস্বস্তিদায়ক অবস্থা থেকে বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থা ফিরে পেয়েছেন।
দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বর্তমানে জেলায় মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা কম থাকায় দুপুরে রোদ উঠেছে, বাতাসের গতিও কিছুটা কম। আকাশ মেঘ ও কুয়াশামুক্ত থাকায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে ছড়াতে পারছে। এতে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দিনে শীত কম অনুভূত হচ্ছে।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার কুয়াশা কিছুটা কমেছে। তার পরও রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা।

ট্যাগস :

কনকনে ঠান্ডায় স্থবির উত্তরের জনজীবন

আপডেট সময় : ০৪:৪৪:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জানুয়ারী ২০২৪

তীব্র শীতে উত্তরাঞ্চলে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় দিনের বেলাতেও যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। অনেক স্থানে গত তিন দিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি। সেই সঙ্গে প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। তীব্র শীতের কারণে বেকার রয়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ।
আমাদের বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, পাবনার বেড়া উপজেলায় তীব্র শীতে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসংলগ্ন মালদাপাড়া, পেঁচাকোলা, জয়নগর, নাকালিয়াসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, হতদরিদ্র মানুষ খরকুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। দুইদিন পর গতকাল বিকালে সামান্য রোদের দেখা পেয়ে অনেকেই রোদে এসে দাঁড়ান। কিন্তু অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই রোদ মিলিয়ে গিয়ে উলটো হিমেল হাওয়া বইতে থাকে। বাঁধে আশ্রিতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুই-তিন দিন তীব্র শীতের কারণে বেকার হয়ে রয়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমিক ও দিনমজুররা। এসব মানুষের বেশির ভাগই তাঁতশ্রমিক হিসেবে নয়তো ইটভাটায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার কারণে তাঁতের সুতা আঠালো হয়ে জড়িয়ে যাচ্ছে। আবার ইটভাটাতেও রোদের অভাবে ইট শুকানো যাচ্ছে না। তাই তাঁতশ্রমিক ও ইটভাটার শ্রমিকদের বেকার হয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না। পেঁচাকোলা গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘দুই-তিন দিন ধইরা রোদের দেখা নাই। তাই ইট ভাটায়ও কাজ বন্ধ আছে। এমনিতেই শীতের কষ্ট, তার ওপর সংসার চালানোই মুশকিল হয়া দাঁড়াইছে।’
পৌষের মাঝামাঝিতে নদনদীবেষ্টিত চলনবিল অঞ্চলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি উত্তরে হিমালয় থেকে আসা ঠান্ডা বাতাসে হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রতিদিনই কমছে তাপমাত্রা। গত তিন দিনের ব্যবধানে উপজেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি থেকে ১১ ডিগ্রিতে নেমেছে। শীতের দাপটে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। বিকেল গড়াতেই তাপমাত্রা নামছে পাল্লা দিয়ে। সন্ধ্যার পর শুরু হচ্ছে কুয়াশাপাত। মাঝরাতে বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। পাশাপাশি থেমে থেমে বইছে ঠান্ডা বাতাস। ঘন কুয়াশা থাকছে বেলা ২টা পর্যন্ত। এ সময় হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। পেটের দায়ে অনেক শ্রমজীবী মানুষ কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই কাজে বের হচ্ছেন।
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দেশের উত্তরের দিনাজপুর জেলায় গত বুধবার এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ এখানে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার পর ঝলমলে রোদ উঠায় মানুষজন কয়েকদিনের কনকনে ঠান্ডার অস্বস্তিদায়ক অবস্থা থেকে বেশ স্বস্তিদায়ক অবস্থা ফিরে পেয়েছেন।
দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
দিনাজপুর আবহাওয়া দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বর্তমানে জেলায় মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা কম থাকায় দুপুরে রোদ উঠেছে, বাতাসের গতিও কিছুটা কম। আকাশ মেঘ ও কুয়াশামুক্ত থাকায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে ছড়াতে পারছে। এতে শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দিনে শীত কম অনুভূত হচ্ছে।
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। তবে গত কয়েক দিনের তুলনায় বৃহস্পতিবার কুয়াশা কিছুটা কমেছে। তার পরও রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা।