ঢাকা ১০:৩৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাপদাহে পুড়ছে ধরণী,ঘরে-বাইরে নেই স্বস্তি

স্বপন কুমার কুন্ডু :
  • আপডেট সময় : ০৪:৫২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৩৬ বার পঠিত

লাগাতার তাপপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে জনজীবন। ঘরে-বাইরে কোথায়ও নেই স্বস্তি। বাতাসে বইছে হল্কা। সপ্তাহজুড়ে টানা দাবদাহে পুড়ছে গোটা পাবনা জেলা। খাঁ খাঁ রোদে পাবনা,ঈশ্বরদী,চাটমোহরসহ উপজেলা শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে লোক চলাচল কমে গেছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তাপদাহে পুড়ছে ধরণী। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক জানান,ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রী রেকর্ড হয়েছে। বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ ছিল শতকরা ২১ ভাগ। ঘরে-বাইরে অসহ্য গরম। ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা।
এদিকে গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম আর তাপদাহের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বেড়েছে রোগির সংখ্যা। প্রতিটি হাসপাতালে শয়্যা সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগি ভর্তি হয়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া,জ¦রসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তীব্র তাপমাত্রার রেকর্ডে পুড়ছে এ জেলার জনপদ। গত কয়েকদিন ধরেই বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বিরাজমান মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পাশাপাশি বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ কম থাকায় ঘরের বাইরে বের হলেই রোদের প্রখরতায় যেন শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তবে এবারে ঘন ঘন লোডশেডিং না থাকায় ঘরে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে মানুষ।
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত শীতপ্রধান এলাকার বিদেশি নাগরিকেরা। তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করেই তাঁরা দিনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিদেশিদের কর্মস্থল ও আবাসিক এলাকার বাইরে ঘোরাফেরা করতে এখন খুব কম দেখা যাচ্ছে। সাধারণত: শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঈশ্বরদী বাজারে বিদেশীদের ভীড় থাকে। কিন্তু তীব্র গরমের কারণে শনিবার (২০ এপ্রিল) বাজারে বিদেশীদের আগমন ছিল অতিনগণ্য।
সরেজমিনে রবিবার রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের আবাসিক গ্রিনসিটি এলকায় এখন ভিন্ন চিত্র। যেখানে শত শত বিদেশি নাগরিকের পদচারণায় মুখর থাকে তা জনমানবশূন্য। গ্রিনসিটির আশেপাশের দোকানগুলোও বন্ধ। প্রকল্পের শ্রমিকরা জানান, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। তীব্র তাপের মাঝেই কাজ করতে হচ্ছে। স্থানীয়রা নিজেরা তাপ সইতে কিছুটা অভ্যস্থ হলেও বিপদে পড়েছেন প্রকল্পে নিয়োজিত রুশসহ অন্যান্য বিদেশী নাগরিকেরা।
তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক মনিরুল বলেন,সড়কে মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম। মালিকের জমা ছাড়াও সংসারের চাল-ডাল কেনার খরচ জোগাতে কষ্ট হলেও রিকশা চালাতে হচ্ছে। তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে বোরো ধান ও লিচুচাষিরা চলমান আবহাওয়ায় বেশি শঙ্কিত। পদকপ্রাপ্ত ঈশ^রদীর লিচুচাষি আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল জানান,তীব্র দাবদাহে গুটি ঝরে পড়ছে। এঅবস্থা চলমান থাকলে এবারে ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, তীব্র খরা পরিস্থিতি বিরাজমান। চলতি বোরো ধানের জমিতে সবসময় ২-৩ ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। পাশাপাশি বোরো ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। লিচুর বিষয়ে তিনি বলেন, লিচু বাগানে সেচ দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই দিনে সেচ দেওয়া যাবে না। রাতে দিতে হবে। এখন সারের প্রয়োজন নেই। তাপমাত্রা কমলে সার প্রয়োগ করতে হবে।
খরায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। দেখা দিয়েছে পানি সংকট।

ট্যাগস :

তাপদাহে পুড়ছে ধরণী,ঘরে-বাইরে নেই স্বস্তি

আপডেট সময় : ০৪:৫২:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

লাগাতার তাপপ্রবাহে চরম দুর্ভোগে জনজীবন। ঘরে-বাইরে কোথায়ও নেই স্বস্তি। বাতাসে বইছে হল্কা। সপ্তাহজুড়ে টানা দাবদাহে পুড়ছে গোটা পাবনা জেলা। খাঁ খাঁ রোদে পাবনা,ঈশ্বরদী,চাটমোহরসহ উপজেলা শহরের ব্যস্ততম সড়কগুলোতে লোক চলাচল কমে গেছে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তাপদাহে পুড়ছে ধরণী। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী পর্যবেক্ষক জানান,ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রী রেকর্ড হয়েছে। বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ ছিল শতকরা ২১ ভাগ। ঘরে-বাইরে অসহ্য গরম। ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। খুব প্রয়োজন না হলে বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তাররা।
এদিকে গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম আর তাপদাহের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে বেড়েছে রোগির সংখ্যা। প্রতিটি হাসপাতালে শয়্যা সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণ রোগি ভর্তি হয়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধরা ডায়রিয়া,জ¦রসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তীব্র তাপমাত্রার রেকর্ডে পুড়ছে এ জেলার জনপদ। গত কয়েকদিন ধরেই বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। বিরাজমান মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। পাশাপাশি বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ কম থাকায় ঘরের বাইরে বের হলেই রোদের প্রখরতায় যেন শরীর পুড়ে যাচ্ছে। তবে এবারে ঘন ঘন লোডশেডিং না থাকায় ঘরে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছে মানুষ।
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে কর্মরত শীতপ্রধান এলাকার বিদেশি নাগরিকেরা। তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করেই তাঁরা দিনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে বিদেশিদের কর্মস্থল ও আবাসিক এলাকার বাইরে ঘোরাফেরা করতে এখন খুব কম দেখা যাচ্ছে। সাধারণত: শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ঈশ্বরদী বাজারে বিদেশীদের ভীড় থাকে। কিন্তু তীব্র গরমের কারণে শনিবার (২০ এপ্রিল) বাজারে বিদেশীদের আগমন ছিল অতিনগণ্য।
সরেজমিনে রবিবার রূপপুর প্রকল্পে কর্মরত বিদেশিদের আবাসিক গ্রিনসিটি এলকায় এখন ভিন্ন চিত্র। যেখানে শত শত বিদেশি নাগরিকের পদচারণায় মুখর থাকে তা জনমানবশূন্য। গ্রিনসিটির আশেপাশের দোকানগুলোও বন্ধ। প্রকল্পের শ্রমিকরা জানান, গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি। তীব্র তাপের মাঝেই কাজ করতে হচ্ছে। স্থানীয়রা নিজেরা তাপ সইতে কিছুটা অভ্যস্থ হলেও বিপদে পড়েছেন প্রকল্পে নিয়োজিত রুশসহ অন্যান্য বিদেশী নাগরিকেরা।
তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন শ্রমজীবী মানুষ। প্রখর রোদে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক মনিরুল বলেন,সড়কে মানুষের চলাচল তুলনামূলক কম। মালিকের জমা ছাড়াও সংসারের চাল-ডাল কেনার খরচ জোগাতে কষ্ট হলেও রিকশা চালাতে হচ্ছে। তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। বিশেষ করে বোরো ধান ও লিচুচাষিরা চলমান আবহাওয়ায় বেশি শঙ্কিত। পদকপ্রাপ্ত ঈশ^রদীর লিচুচাষি আব্দুল জলিল কিতাব মন্ডল জানান,তীব্র দাবদাহে গুটি ঝরে পড়ছে। এঅবস্থা চলমান থাকলে এবারে ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলন বিপর্যয় ঘটবে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, তীব্র খরা পরিস্থিতি বিরাজমান। চলতি বোরো ধানের জমিতে সবসময় ২-৩ ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। পাশাপাশি বোরো ধানের জমিতে বিঘাপ্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে। লিচুর বিষয়ে তিনি বলেন, লিচু বাগানে সেচ দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই দিনে সেচ দেওয়া যাবে না। রাতে দিতে হবে। এখন সারের প্রয়োজন নেই। তাপমাত্রা কমলে সার প্রয়োগ করতে হবে।
খরায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। দেখা দিয়েছে পানি সংকট।