“সমসাময়িক রাজনীতি ও জনগণের প্রত্যাশা”
- আপডেট সময় : ০৯:২৮:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০২৪ ৯৬ বার পঠিত
রাজনৈতিক অস্থিরতা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়, খুব পুরাতন ও অভ্যাসগত কারনেই আমরা সকল অস্থিরতা কাটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়েছি বার বার কিন্তু এখনো আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হয় নাই। আমরা খুব স্পষ্ট ভাবে যদি স্বাধীনতা পূর্ব রাজনীতির কথা বলি তখন রাজনীতিতে দেশপ্রেম ছিলো, দেশের জন্যে আত্মত্যাগ ও বুলেটের সামনে বুক পেতে দেবার নজির আমরা ইতিহাসের পাতায় পাতায় দেখতে পাই, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা, ১৯৬৯ এর গনঅভ্যূত্থান সব শেষ ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে জয় ;- সব এসেছিলো দেশপ্রেমী রাজনৈতিক নেতাদের হাত ধরে। আমরা স্বাধীন দেশ পেলাম কিন্তু সত্যিকারের স্বাধীনতার স্বাদ পেলাম না।
শুরু হলো স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতা ১৯৭৫, ১৯৭৯ থেকে ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০৭ সহ সবশেষ ২০২৪ সালে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক পরিবর্তন দেখতে পাই। এই ২০২৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্যে দেশের প্রায় ৮২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু ঋণ এখন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। দেশের প্রায় ২৭ লক্ষ শিক্ষিত ছেলে-মেয়ে বেকার। বর্তমানে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ রয়েছে ১৬ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে দেশের তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। এমন কঠিন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের এই বাংলাদেশ। এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি বার বার হতে হয়েছে যেটার অন্যতম প্রধান কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা।
সংবিধান আমাদের সুযোগের সমতার কথা বলে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, গনতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের কথা বলে কিন্ত এই অধিকার গুলোর প্রয়োগ সঠিক ভাবে হয়নি বার বার এই অধিকার গুলো হরন করা হয়েছে। এটা সকল রাজনৈতিক দল করেছে যখন যে ক্ষমতায় বসেছে সেই দলীয়করণ করে সকল ব্যাবস্থার অপপ্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে। কোন দল কম করছে, কোন দল বেশি করেছে। এই সংস্কৃতির ফলে দেশে রাজনৈতিক স্বচ্ছতা নেই, প্রতিহিংসার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আর এই প্রতিহিংসায় বার বার বলি হয়েছে এই দেশের সাধারণ জনগন। হত্যা, গুম, ধর্ষণ সহ অজস্র অন্যায় বিচারের শিকার হয়েছে অনেকেই। শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব করা হয়েছে। এই অবিচারের সংস্কৃতি বাংলাদেশে আবহমান কাল ধরেই চলে আসছে ক্ষমতার পালাবদলে চোর সাধু হয়েছে, সাধু হয়েছে চোর। এই অমানবিক খেলায় বাংলার মানুষ ক্ষিপ্ত, ভারাক্রান্ত ও ক্লান্ত।
এই প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশের মানুষ আর চায় না। দেশের মানুষ তার সকল বিষয়ে প্রাপ্য ও ন্যায্য অধিকার চায়। দেশের মানুষ চায় থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে তাঁর অভিযোগ শুনা হবে, ঘুষ লাগবে না, আদালত তাঁকে ন্যায় বিচার দিবে। কৃষক চায় সার, বীজ, কীটনাশকের মূল্য হ্রাস হবে, তাঁদের ফসলের ন্যায্য দাম পাবে কোন সিন্ডিকেট থাকবে না।
সবাই ভোটের অধিকার চায়। নাগরিক অধিকার ভোটের মাধ্যমে সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁরা যোগ্য ব্যক্তিকে চেয়ারে বসাতে চায়।
শিক্ষিত সমাজ চায় মেধায় তাঁদের সকল চাকুরী হবে, বেকারত্বের অবসান হবে। সকল বেতন বৈষম্য দূর হবে, বেসরকারি স্কুল – কলেজ শিক্ষকদের বেতন অমানবিক ও অসম্মানজনক যার সঠিক সমাধান চায় সবাই।
ন্যায়বিচার, সুশাসন ও জবাবদিহিতা ভিত্তিক একটি সুখি সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে আপামর বাঙালি। সামনের বাংলাদেশ হবে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার বাংলাদেশ যেখানে সবার সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে জন রায় নিয়ে যে সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে তা হবে জন বান্ধব, জনকল্যাণমুখী, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তায় প্রতিশ্রুতিদ্ধ। সামনের বাংলাদেশ হবে উন্নত সুখি সমৃদ্ধ এক স্বদেশ যেখানে দুঃখ, দারিদ্র্যতা থাকবে না, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে, সুশাসনে প্রাণ খুলে সবাই মুক্ত বাতাসে বলবে আজ আমরা সত্যিকারের স্বাধীনতার সুখ পেলাম।
লেখক :- মোঃ ইমরান হোসেন
প্রভাষক – সমাজকর্ম বিভাগ, সলিমপুর ডিগ্রি কলেজ, ঈশ্বরদী, পাবনা।
ইমেইল :- imranhossainjnu94@gmail.com