ঢাকা ১০:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ :
Logo সাঁথিয়ায় এক ব্যাক্তিকে গলা কেটে হত্যা Logo চাটমোহর এম এ আউয়াল ছাইকোলা টেকনিক্যাল এন্ড বিএমআই’র শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন Logo আগস্টে সড়কে ঝরল ৪৭৬ প্রাণ! Logo চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে বের করে দিয়েছে এলাকাবাসী Logo জাতীয়তাবাদী প্রচার দলে ১৪ জনকে অন্তর্ভুক্ত Logo চাটমোহরে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু Logo চাটমোহরে অবৈধ সোঁতি বাঁধ অপসারণ ও জাল পোড়াল প্রশাসন Logo সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুফল ভোগ করবে জনগণ Logo ডিমসিদ্ধ করতে গিয়ে ঈশ্বরদীতে ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড Logo নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পেয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী

বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে মারা গেল সাগর

বড়াল প্রতিবেদক:
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০২৪ ১২১ বার পঠিত

দিনমজুর বাবার অভাবী সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরি নিয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী তরুণ সাগর হোসেন। ১০ মার্চ বেতন তুলে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই আগুন কেড়ে নিল তার ও পরিবারের স্বপ্ন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে তার নামটিও। এ ঘটনায় মারা গেছে ৪৬ জন। অথচ ওই ভবনে অবস্থিত পোশাক প্রতিষ্ঠান ইপিলিয়ানের শোরুমে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার মাত্র দুইদিন আগে যোগদান করেছিলেন সাগর। মৃত্যুই যেন সেখানে সাগরকে ডেকে নিয়ে গেছে। নিহত সাগর পাবনার ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের ধানুয়াঘাটা পূর্বপাড়া গ্রামের হাসান আলী ও সাবিনা খাতুন দম্পতির ছেলে। এ বছর এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাগর ছিলেন সকলের বড়। তার বাবা দিনমজুর এবং মা গৃহিনী।
ধানুয়াঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ঢাকায় কর্মরত মনিরুল ইসলাম মনির জানান,সাগর গারদা শিলড সিকিউরিটি কোম্পানীর মাধ্যমে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পোশাক প্রতিষ্ঠান ইপিলিয়ন শোরুমে জয়েন করেছিলেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় আগুনে আটকা পড়ে মারা যান তিনি।
শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে সাগরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়। শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা-মা। মাঝে মাঝে ছেলের জন্য আর্তনাদ করছেন তারা। তাদের সান্তনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা।
সাগরের বাবা হাসান আলী বলেন, দিনমজুরি করে কোন রকমে সংসার চালাই। ছেলেকে লেখাপড়া করানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। বাবা ছেলে আলোচনা করে কর্মের সন্ধানে তাকে ঢাকায় যেতে বলি। চার মাস আগে সে ঢাকায় গিয়ে সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। সে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পাঠাত। তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলছিল। গতরাতে একটার দিকে জলসা শুনে বাড়ি ফেরার পর আমি শুনতে পাই আমার ছেলে নাই। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব।
সাগরের মা সাবিনা খাতুন বলেন, দুদিন আগে ছেলের সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে। বেতন তুলে দশ তারিখে বাড়ি আসবে বলেছিল। আমি বলেছিলাম যে টাকার দরকার নাই, তুমি বাড়ি চলে আসো। কিন্তু তার আগেই আমার ছেলেটা পৃথিবী থেকে চলে গেল— বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাগরের মা।
হাদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন বলেন,সাগর আমাকে দাদা বলে ডাকত। ঢাকা থেকে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে। ঢাকা যাবার আগেও আমার সাথে কথা বলেছে। শুক্রবার সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানলাম বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় সাগর মারা গেছে। এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তার পরিবারটি খুবই অসহায়। আমি এবং উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করবো। সেইসাথে দাবি জানাই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় যেন পরিবারটি ক্ষতিপূরণ পায়।

ট্যাগস :

বেইলি রোডের অগ্নিকান্ডে মারা গেল সাগর

আপডেট সময় : ০৫:৫৮:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ মার্চ ২০২৪

দিনমজুর বাবার অভাবী সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরি নিয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী তরুণ সাগর হোসেন। ১০ মার্চ বেতন তুলে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তার আগেই আগুন কেড়ে নিল তার ও পরিবারের স্বপ্ন।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডের ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে তার নামটিও। এ ঘটনায় মারা গেছে ৪৬ জন। অথচ ওই ভবনে অবস্থিত পোশাক প্রতিষ্ঠান ইপিলিয়ানের শোরুমে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনার মাত্র দুইদিন আগে যোগদান করেছিলেন সাগর। মৃত্যুই যেন সেখানে সাগরকে ডেকে নিয়ে গেছে। নিহত সাগর পাবনার ফরিদপুর উপজেলার হাদল ইউনিয়নের ধানুয়াঘাটা পূর্বপাড়া গ্রামের হাসান আলী ও সাবিনা খাতুন দম্পতির ছেলে। এ বছর এইচএসসি পাশ করেছেন তিনি। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সাগর ছিলেন সকলের বড়। তার বাবা দিনমজুর এবং মা গৃহিনী।
ধানুয়াঘাটা গ্রামের বাসিন্দা ঢাকায় কর্মরত মনিরুল ইসলাম মনির জানান,সাগর গারদা শিলড সিকিউরিটি কোম্পানীর মাধ্যমে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পোশাক প্রতিষ্ঠান ইপিলিয়ন শোরুমে জয়েন করেছিলেন। সেখানে কর্মরত অবস্থায় আগুনে আটকা পড়ে মারা যান তিনি।
শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেলে সাগরের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর ভিড়। শোকে পাথর হয়ে গেছেন বাবা-মা। মাঝে মাঝে ছেলের জন্য আর্তনাদ করছেন তারা। তাদের সান্তনা দেওয়ার ভাষাও যেন হারিয়ে ফেলেছেন প্রতিবেশীরা।
সাগরের বাবা হাসান আলী বলেন, দিনমজুরি করে কোন রকমে সংসার চালাই। ছেলেকে লেখাপড়া করানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। বাবা ছেলে আলোচনা করে কর্মের সন্ধানে তাকে ঢাকায় যেতে বলি। চার মাস আগে সে ঢাকায় গিয়ে সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে। সে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পাঠাত। তা দিয়ে মোটামুটি সংসার চলছিল। গতরাতে একটার দিকে জলসা শুনে বাড়ি ফেরার পর আমি শুনতে পাই আমার ছেলে নাই। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচব।
সাগরের মা সাবিনা খাতুন বলেন, দুদিন আগে ছেলের সাথে মোবাইলে কথা হয়েছে। বেতন তুলে দশ তারিখে বাড়ি আসবে বলেছিল। আমি বলেছিলাম যে টাকার দরকার নাই, তুমি বাড়ি চলে আসো। কিন্তু তার আগেই আমার ছেলেটা পৃথিবী থেকে চলে গেল— বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাগরের মা।
হাদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম হোসেন বলেন,সাগর আমাকে দাদা বলে ডাকত। ঢাকা থেকে এসে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে। ঢাকা যাবার আগেও আমার সাথে কথা বলেছে। শুক্রবার সকালে ফেসবুকের মাধ্যমে জানলাম বেইলি রোডের আগুনের ঘটনায় সাগর মারা গেছে। এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। তার পরিবারটি খুবই অসহায়। আমি এবং উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করবো। সেইসাথে দাবি জানাই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় যেন পরিবারটি ক্ষতিপূরণ পায়।